শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শবেবরাতে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয়

ইসমাঈল সিদ্দিকী:
পবিত্র হাদিসের ভাষায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ১৫ শাবানের রাত বলা হয়। ‘শবেবরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এ দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। শবেবরাতে নিহিত রয়েছে মুমিন-মুসলমানের মুক্তি ও কল্যাণের বিভিন্ন উপকরণ। তাই এ রাতকে শবেবরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়েছে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন। তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন…। যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা ওঠালেন এবং নামাজ থেকে অবসর হলেন তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি ধারণা করছ যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) তোমার অধিকার হরণ করছেন? এরপর রাসুল (সা.) বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জানো এটি কোন রাত? হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুল (সা.) বললেন, এটি শাবানের ১৫ তারিখের রাত। এ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করা হয়, দয়াপ্রার্থীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হয়। তবে বিদ্বেষপোষণকারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। (শোয়াবুল ইমান : ১৪০৬)

আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের সুরা দোখানের ৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘একটি বরকতময় রজনীতে আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি।’ এরপর ৪ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘এ রাতেই প্রত্যেক জ্ঞানপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় অর্থাৎ মানুষের ভাগ্যতালিকা বণ্টন হয়।’ এদিকে ভাগ্যতালিকা বণ্টনের রাতকে রাসুল (সা.)-এর হাদিসে শবেবরাত বলা হয়েছে। এ দুটি কথা একত্র করলে মর্ম দাঁড়ায় শবেবরাতেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে। অথচ সুরা কদরের ১ নম্বর আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, পবিত্র কোরআন শবেকদরে নাজিল করা হয়েছে। যে রাতটি পবিত্র রমজানের অন্তর্ভুক্ত।

এখানে লক্ষণীয় দুটো বিষয় একটি হচ্ছে কোরআন মাজিদ নাজিল হওয়ার রাত, আরেকটি হচ্ছে ভাগ্যতালিকা বণ্টনের রাত। সুরা কদরের ১ নম্বর আয়াতে প্রমাণ যে, রমজান মাসের শবেকদরে কোরআন নাজিল হয়েছে আর হাদিসে প্রমাণিত যে, ভাগ্য বণ্টনের রাত হলো শবেবরাত।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, সুরা দোখানের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতে তো কোরআন নাজিলের রাতকেই ভাগ্য বণ্টনের রাত বলা হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে মুফাসসিররা লিখেছেন, শবেবরাতেই ভাগ্য বণ্টন হয় তবে এর বাস্তবায়ন শুরু হয় শবেকদর থেকে। এ হিসাবে সুরা দোখানের ভাগ্য বণ্টনের রাতকেই কোরআন নাজিলের রাত বলা হয়েছে। তাফসিরে কুরতুবিসহ নির্ভরযোগ্য অনেক তাফসিরে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উদ্ধৃত হয়েছে যে, শবেবরাতে লওহে মাহফুজ থেকে কোরআন অবতরণের কাজ শুরু হয় এবং শবেকদরে এসে তার সমাপ্তি ঘটে। (কুরতুবি ১৬ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮৫, তাফসিরে তাবারি ১১ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২২১)

সুতরাং শবেবরাতের কোনো প্রসঙ্গই স্পষ্ট বা পরোক্ষভাবে কোরআন মাজিদে নেই বলা অজ্ঞতা আর বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।

এ রাতে করণীয় : এ রাতে আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দাদের ওপর বিশেষ রহমত দান করেন এবং গোনাহগারদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দেন বিধায় মুসলমানদের উচিত এমন রহমত ও বরকতপূর্ণ রাতকে গনিমত মনে করে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা অবলম্বন না করে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও সব ধরনের মাসনুন ইবাদতের মধ্য দিয়ে এ রাত পার করা।

আর হ্যাঁ, এ রাতকে অন্যসব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে সবগুলোকে ‘মওজু’ বা ‘জইফ’ বলা যেমন ভুল তেমনি এ রাতকে শবেকদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা। বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি কোনোটিই কাম্য নয়। যতটুকু ফজিলত প্রমাণিত ততটুকুই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বর্জনীয় : এ রাতের নিকৃষ্টতম বেদআতগুলোর মধ্যে নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ঘরবাড়ি, দোকানপাটে আলোকসজ্জা করা। খেলাধুলা ও আতশবাজির উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া। প্রচুর টাকা ব্যয় করে মসজিদে রঙ-বেরঙের বাতি জ্বালানো। ইবাদত মনে করে হালুয়া-রুটির আয়োজন করা। অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION